বর্তমান ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির মাঝেই আরেকটি চিন্তার বিষয় সংযুক্ত হয়েছে, তা হলো ডেঙ্গু। ডেঙ্গু রোগ থেকে গুরুতর অসুস্থতা এবং কোন কোন ক্ষেত্রে রোগীর মৃত্যু হওয়ারও আশংকা থাকে। চলতি মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন প্রায় দুই শতাধিক নতুন ডেঙ্গু রোগী সনাক্ত হচ্ছে। কিন্তু করোনার প্রকোপে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে সাধারণ মানুষের দৃষ্টি এড়িয়ে যাচ্ছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ডেঙ্গু এবং কোভিড একসাথে হচ্ছে যা খুব মারাত্মক।
ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা মূলত এডিস প্রজাতির স্ত্রী মশার মাধ্যমে ছড়ায়। মূলত গ্রীষ্ম-বর্ষাকালে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। শহুরে অঞ্চলের অতিরিক্ত গরম, বৃষ্টিপাত, আপেক্ষিক আর্দ্রতা এবং অপরিকল্পিত নগরায়নের ফলে এই ভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণসমূহ খুবই সাধারণ। যে কারণে অনেকেই এই লক্ষণগুলো দেখার পরেও এড়িয়ে যায়। জ্বর, শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা,গিটে ব্যাথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা অনুভব করা, শরীরে র্যাশ ওঠা এগুলো ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায়ের লক্ষণ। তবে সঠিক সময় সনাক্ত না হলে এই লক্ষণগুলো গুরুতর রূপ ধারণ করতে সক্ষম। পেটে ব্যথা, ক্রমাগত বমি হওয়া, নাক, দাঁতের গোড়া থেকে রক্তক্ষরণ, বমি কিংবা পায়খানার সঙ্গে রক্তক্ষরণ, শ্বাসকষ্ট, অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ এগুলো ডেঙ্গুর গুরুতর পর্যায়ের লক্ষণ।
ডেঙ্গু হলে রক্তের প্লাটিলেট বা অণুচক্রিকা, শ্বেতকনিকা কমে যায় এবং হেমাটোক্রিট বেড়ে যায়। এর জন্য জ্বর হওয়ার প্রথম কয়েকদিনের মদ্ধেই কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট ( সি.বি.সি) এবং এন এস ওয়ান এন্টিজেন ( NS1 AG) পরিক্ষার মাদ্ধমে ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব। জ্বর শুরু হওয়ার ৪-৫ দিন পরও ডেঙ্গু এন্টিবডি টেস্ট করে ডেঙ্গু শনাক্ত করা সম্ভব।
প্রাথমিক অবস্থায় বাড়ি থেকেই ডেঙ্গুর চিকিৎসা সম্ভব। তবে অবস্থা গুরুতর পর্যায়ে চলে গেলে রোগীকে অবশ্যই হসপিটালে ভর্তি করে যথাযথ চিকিৎসা দিতে হবে। এমতাবস্থায় রোগীকে নিবিড় পরিচর্যা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখতে হবে। সাধারণত রোগীর শরীরে রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের নিচে নেমে গেলে রোগীকে রক্ত নিতে হয়। ডেঙ্গুরোগীদের সর্বোচ্চ মানের সেবা নিশ্চিৎ করার জন্য এভারকেয়ার হসপিটাল চট্টগ্রাম-এ একটি পৃথক ডেঙ্গু ইউনিট রাখা হয়েছে যেখানে ডেডিকেটেড আইসিইউ, প্লাটিলেট অ্যাফ্রেসিস মেশিন এবং ব্লাড ব্যাংক সর্বক্ষণ প্রস্তুত রয়েছে। আনুসাঙ্গিক ওষুধের পাশাপাশি শারীরিক এবং মানসিক বিশ্রাম এ রোগের অন্যতম নিরামক। পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণ পানি, ফলের রস, স্যুপ, ডাবের পানি, স্যালাইন ইত্যাদি পান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
লেখক: কনসালটেন্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন, এভারকেয়ার হসপিটাল, চট্টগ্রাম।