নাটক! রোমাঞ্চ! রহস্য! এক মুহূর্তে যেন প্রদর্শনী হলো ফুটবলের লুকানো সৌন্দর্য। রহস্যময় শেষ মুহূর্তটা হার মানাবে যেকোনো থ্রিলার মুভিকে। যেন একইসাথে শ্বাসরুদ্ধকর উত্তেজনা, মুহূর্তে মুহূর্তে রঙ বদলানো উন্মাদনা, আর দমবন্ধ মুগ্ধতার অপার সমাহার। তবে ষোল আনা শিহরণ ছড়ানো এই ম্যাচে শেষ হাসি হেসেছে আর্জেন্টিনাই। পেনাল্টি শুট-আউটে ডাচদের ৪-৩ গোলে হারিয়ে কাতার বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে আকাশী নীলরা।
লুসাইল স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে নেদারল্যান্ডসকে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। শুরুতে এক গোলের পর দ্বিতীয়ার্ধে আরেক গোল। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকেও নাটকীয়তা এড়াতে পারেনি লিওনেল মেসির দল। সে বাধা কাটিয়ে যেন ব্রাজিলের সুখ স্মৃতি ফিরিয়ে এনে সেমিফাইনালে যায় তারা।
খেলার শুরু থেকেই দুই দল রক্ষণ মজবুত নিশ্চিত করেছিল। উভয় দলের গোলপোস্টের সামনে যেন দাঁড়িয়ে ছিল একেকটি দুর্গ। সেই দুর্গ ভেদ করে গোলের দেখা পেতে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ ছিল শুরু থেকেই। সুযোগ পায় দুই দলই। তবে নষ্ট করেছে সবাই। খেলার সময় যখন গড়ায় ৩৪ মিনিটে মেসির পাসে গোল করেন মোলিনা। সেই গোলে এগিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় আর্জেন্টিনা।
বিরতির পর আক্রমণে ধার বাড়ায় নেদারল্যান্ডস। শেষ চারে ওঠার লড়াইয়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে। দুই প্রান্ত ব্যবহার করে আক্রমণে উঠছিলেন গাকপোরা। কিন্তু আর্জেন্টিনার বক্সে সে রকম বিপদ তৈরি হয়নি। অন্যদিকে মাঝে মাঝে প্রতি আক্রমণ থেকে নেদারল্যান্ডসের বক্সে উঠে আসতে দেখা যায় মেসিদের। যাতে মনে হয় ম্যাচ থেকে খেই হারিয়ে ফেলে তারা।
তবে ম্যাচের সময় যখন ৬৫ মিনিটে গড়ায়, তখনই খেলায় ফিরে আসে আর্জেন্টিনার ধার। লিওনেল মেসির পায়ে বেশ কয়েক বার বিপদ তৈরি হয় নেদারল্যান্ডসের বক্সে। তবে তার পাস থেকে সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি ম্যাক অ্যালিস্টার। ৬৩ মিনিটের মাথায় ফ্রিকিক পায় আর্জেন্টিনা। মেসির শট একটুর জন্য বাইরে বেরিয়ে যায়।
পাস থেকে সুযোগ না পেলেও ফাউল থেকে আসে পেনালটির সুযোগ, যা হাতছাড়া করেননি মেসি। বক্সের মধ্যে আকুনাকে ফাউল করেন ডেঞ্জিল ডামফ্রিস। ৭১ মিনিটে পেনালটি শট নেন মেসি। গোলরক্ষকের বাঁ দিক দিয়ে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি। ফলে ব্যাবধান দ্বিগুণ করে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা।
তারপর ম্যাচে ফেরার জন্য মরিয়া হয়ে উঠে ডাচরা। আক্রমণের ধার আরও বাড়ায়। টিকিটাকা থেকে বেরিয়ে আসতেও দেখা যায়। ফলে ৮৩ মিনিটে এক গোল শোধ করে নেদারল্যান্ডস। ভেরগুইসের দেওয়া পাস থেকে হেড করে দুর্দান্ত এক গোল করেন ওউট উইঘর্স্ট। নাটকীয়তার শুরু হয় সেখানেই।
সেই গোল হজমের পর আর্জেন্টিনা ফিরে যায় প্রথমার্ধের কৌশলে। শেষ মুহূর্তে রক্ষণভাগ যেন আরও মজবুতে জোর দেয় তারা। তবে সেই মনোযোগ কাজে আসেনি। সংযুক্তি ১০ মিনিট সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে বক্সের বাইরে ফ্রি-কিক পেয়েছিল ডাচরা। বার্গুইসের বাঁ পায়ের শটে গোল করলেন উইঘর্স্ট। এ যেন নাটকীয় রূপ। উপমহাদেশীয় সিনেমার দৃশ্য বললেও ভুল হবে না। যেন পাণ্ডবরা যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে, আর তখনই অর্জুন এসে বাঁচিয়ে দেন।
ডাচদের সেই অর্জুন হলেন উইঘর্স্ট। শেষ মুহূর্তে যার দুই গোলে প্রায় হারতে বসা ম্যাচটিতে সমতায় ফিরে ডাচরা। ফলে খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। সেখানেও কোনো দলই পারেনি লক্ষ্যভেদ করতে। অতিরিক্ত সময় শেষ হওয়ার ১০ মিনিট আগে আচমকা স্কালোনি মাঠে নামান ডি মারিয়াকে। তারপরই যেন পালটে যায় চিত্র। ফের আক্রমণের ধার বাড়ায় তারা। অনেকগুলো সুযোগ সৃষ্টি করতে পেরিছিল আর্জেন্টাইনরা। কিন্তু ফিনিশারদের ব্যর্থতায় তা আর গোলে রূপ নেয়নি। ফলে ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।
সেখানে শুরুতেই ডাচদের দুটি পেনালটি শট ফিরিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। তারপর গোল পেলেও আর সম্ভব হয়নি। ৪-৩ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা। নিশ্চিত হয় ১৪ ডিসেম্বর ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে সেমিফাইনাল।