মসজিদের জায়গায় কিংবা পারিবারিক কবরস্থান এবং সবার জন্য উন্মুক্ত (ওয়াক্ফ) কবরস্থানে লাগানো গাছের ফল পাওয়া গেলে তা খাওয়া যাবে কিনা- এ বিষয়টি অনেকেরই জানা নেই। তবে অনেকেই কবরস্থানের ফল-গাছ ইত্যাদি ব্যবহার করতে চায় না। এ সম্পর্কে ইসলামের দিকনির্দেশনা কী?
মসজিদের খালি জায়গায় অনেক সময় ফল-ফুল ও বনজ গাছ লাগানো হয়। আবার পারিবারিক কিংবা ওয়াক্ফ কবরস্থানে প্রিয়জনের কবরের পাশে এবং খালি জায়গায়ও লাগানো হয় এসব গাছ। এ সব গাছের ফল, ফুল, কাঠ কিংবা বনজ গাছ ব্যবহারে ইসলামিক স্কলাররা কিছু অভিমত ব্যক্ত করেছেন; তাহলো-
মসজিদের জায়গার ফল খাওয়া
মসজিদের খালি জায়গায় অনেক সময় মসজিদ কমিটি কিংবা সংশ্লিষ্টরা ফলজ ও বনজ গাছ লাগিয়ে থাকেন। এসব গাছের ফল ও কাঠ সবই মসজিদের। মসজিদের জায়গার গাছের মালিক মসজিদ এবং এর ফলও মসজিদের।
তাই মুসল্লি কিংবা অন্য কারো জন্য বিনামূল্যে এসব ফল খাওয়া বৈধ হবে না। সুতরাং কেউ যদি মসিজদের জায়গায় থাকা গাছ ব্যবহার করতে চায় কিংবা ফল খেতে চায় তবে তাকে অবশই ন্যায্য মূল্য পরিশোধ করতে হবে।
কবরস্থানের ফল খাওয়া
ইসলামিক স্কলারদের মতে, কবরস্থানে খালি জায়গার যেখানে কোনো কবর নেই, সেখানে অন্য কোনো কাজ করা জায়েজ নেই। তবে খালি স্থানে বিভিন্ন ধরনের ফল গাছ লাগানো বৈধ। আর তা খাওয়াও বৈধ। বিক্রি করে কবরস্থানের উন্নয়ন করাও বৈধ।
তবে এ বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হবে যে-
কবরস্থানে লাগানো এসব গাছ যেন লাশ দাফনে প্রতিবন্ধক হয়ে না দাঁড়ায়। আর এসব গাছের কাছে যাওয়ার জন্য যেন কবরের উপর দিয়ে যাতায়াত করতে না হয়। সুতরাং কবরস্থানে লাশ দাফনে অসুবিধা না হলে এবং কবরের উপরের দিয়ে যাতায়াত করতে না হলে, সে কবরস্থানের ফল খাওয়ায় কোনো অসুবিধা নেই। কবরস্থানের গাছের ফল খাওয়া হালাল এবং বৈধ। কবরস্থানের গাছের ফল হওয়ার কারণে এ ফল খাওয়া বা গাছ ব্যবহার করা যাবে না, এটা অযথা কথা। এমন বিশ্বাস পোষণ করা কুসংস্কার ব্যতিত কিছুই নয়।
পারিবারিক কিংবা ওয়াক্ফ কবরস্থানের ফল খাওয়া
কারণ কবরস্থান যদি ব্যক্তি মালিকানাধীন হলে কিংবা ওয়াকফকৃত জায়গায় হয় তবে সব মানুষের জন্য এসব কবরস্থানের ফল খাওয়ার ব্যাপারেও রয়েছে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা।তাহলো-
কবরস্থান যদি কারো ব্যক্তি মালিকানাধীন (পারিবারিক কবরস্থান) হয়, তবে মালিকের অনুমতি ব্যতিত কবরস্থানের ফুল, ফল ও গাছ ব্যবহার করা যাবে না। পারিবারিক কবরস্থানের মালিক এর ফলমূল খেতে পারবে; দান করতে পারবে। ওই পরিবারের ব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে অন্যরাও এর ফল খেতে পারবে।
আর যদি কবরস্থান ওয়াকফকৃত হয় তবে ওয়াক্ফকৃত কবরস্থানের গাছপালা ও ফলমূল ওয়াক্ফের সম্পত্তি। এর ফলে কবরস্থানের ফলমূল খাওয়া এবং গাছ ব্যবহার করা যাবে না।
কেননা রাষ্ট্র কর্তৃক নির্ধারিত কবরস্থান কিংবা ওয়াক্ফকৃত কবরস্থান উভয়টির সব উৎপাদন কবরস্থানের নিজস্ব সম্পদ। কবরস্থানের দায়িত্বে থাকা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগুলোকে বিক্রি করে কবরস্থানের উন্নয়ন ও সংরক্ষণের কাজে লাগাবেন। এলাকাবাসীর জন্য বিনামূল্যে এ ধরনের কবরস্থানের ফলমূল ভোগ করা জায়েয নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগিরি, ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া, আলবাহরুর রায়েক, আদ্দুররুল মুখতার)
মনে রাখতে হবে
মসজিদ কিংবা কবরস্থানের ফল কোনোভাবেই খাওয়া যাবে না; ঢালাওভাবে এ ধারণা পোষণ করা সঠিক নয়। ব্যক্তিমালিকানাধীন কবরস্থানের মালিকরা এর ফল খেতে পারবে। যথাযথ কর্তৃপক্ষেল অনুমতি সাপেক্ষেও ফল খাওয়া যাবে। আবার কবরস্থানের ফল বিক্রি করে এর উন্নয়ন করা যাবে। বিক্রি করা ফল কিনে নিয়েও খাওয়া যাবে এতে কোনো অসুবিধা নেই।
কবরস্থানের ফল এমনিতে কিংবা কিনে নিয়ে খাওয়া যাবে না মর্মে সমাজে প্রচলিত কথাটি একটি কুসংস্কারমূলক কথা। এ কথার কোনো ভিত্তি নেই।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উল্লেখিত কুসংস্কার থেকে হেফাজত করুন। কবরস্থানের উন্নয়নে এর ফল কিনে খাওয়ায় সহযোগিতা করাও সাওয়াবের কাজ। তাতে অংশগ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
আলোকিত রাঙ্গুনিয়া /জাগো নিউজ