মুহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা।
তরুণ মাহমুদুল ইসলাম রাসেল অসুস্থ বন্ধুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ফ্লু কর্ণারে দেখলেন রোগীদের ছুটোছুটি আর ভিড়। চিকিৎসকদের চিকিৎসা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি দেখে হাসপাতালে আসা করোনা উপসর্গ রোগীদের সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি।
মাসখানেক ধরে প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লু কর্ণারে রোগী ও চিকিৎসকদের সহযোগিতা করছেন তিনি। সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা পরীক্ষার নির্দিষ্ট ফরম পূরণ করে দিচ্ছেন। নমুনা দিতে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করছেন। এর জন্য তিনি কোনো পারিশ্রামিক নিচ্ছেন না, স্বেচ্ছায় তিনি এই কাজটি করছেন। সচরাচর এই কাজটি করে থাকেন চিকিৎসক কিংবা স্বাস্থ্যকর্মী।
তরুণ রাসেল আলোকিত রাঙ্গুনিয়াকে,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ফ্লু কর্ণারে প্রতিদিন রোগীদের ভিড় দেখা যায়। ফ্লু কর্ণারের কর্তব্যরত চিকিৎসক রোগীদের সামাল দিতে অনেকটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। করোনা উপসর্গ নিয়ে আসা রোগীদের চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র লেখা আর নমুনা পরীক্ষা দেয়া রোগীদের ফরম পূরণ করতে ৫ থেকে ১০ মিনিট সময় ব্যয় করতে হয়। অনেক সময় একেক রোগীদের বেশিক্ষন সময় দিতে গিয়ে রোগীদের লাইন দীর্ঘ হয়ে যায়। অনেক সময় নমুনা পরীক্ষা দেয়া বয়স্ক ও অসুস্থ রোগীরা নমুনা পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে পারেন না। এই কাজটিতে চিকিৎসক ও রোগীদের সহযোগিতা করতে পারলে চিকিৎসকরা অল্প সময়ে বেশি সংখ্যক রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে পারবেন রোগীদের কষ্টও কমে আসবে। এছাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের টিকা কেন্দ্রেও সময় দিতে হচ্ছে। এই চিন্তা থেকে মূলত কাজটি করা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চাইলে রোগীদের সেবার জন্য টিকা কেন্দ্রেও তিনি সময় দিতে প্রস্তুত রয়েছে।
রাসেল চট্টগ্রামের একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় প্রশাসনে স্নাতকোত্তর (এমবিএ)করছেন। এছাড়া তিনি উপজেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহসভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। তিনি বলেন, হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে পরিচিত অনেকেই করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে নিরুৎসাহিত করেন। কেউ কেউ সাহস দেন, কাজ করতে উৎসাহও দিচ্ছেন। দেশে করোনা মহামারিতে সেবা মূলক এমন একটি কাজ করে তিনি অতিতৃপ্তি পান। মানুষের জন্য কিছু করা তিনি সম্মানজনক মনে করেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন গড়ে শ খানেক করোনা উপসর্গ নিয়ে ফ্লু কর্ণারে চিকিৎসা নিতে আসেন। এর মধ্যে প্রতিদিন গড়ে ৬০ থেকে ৭০ জনকে নমুনা পরীক্ষা দিতে বলা হয়। তাঁদের নমুনা দিতে হলে অবশ্যই নির্দিষ্ট ফরম পূরন করতে হয় তারপর নমুনা দিতে পারেন। চিকিৎসক কিংবা হাসপাতালের অন্য কোনো কর্মীকে ফরম পুরণ করতে অনেক সময় ব্যয় করতে হয়। মাহমুদুল রাসেল আরো বলেন, আগে এই ফরম হাসপাতালের চিকিৎসক কিংবা অন্য কর্মীরা পূরণ করতেন। এই কাজে স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করার কারনে চিকিৎসক কিংবা কর্মীরা আরো বেশি রোগীদের সেবা দিতে কিংবা সময় দিতে পারছেন।
জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা হিমাদ্রী চৌধুরী বলেন, ” তরুণের স্বেচ্ছায় কাজটি করার কারনে চিকিৎসকরা রোগীদের বেশি সময় দিতে পারছেন। এছাড়া রোগী এবং চিকিৎসকদের কস্টও অনেকাংশে কমে যাচ্ছে। করোনাকালীন তরুণের এমন উদ্যোগটি অন্যদের উৎসাহ যোগাচ্ছে।