আৰোকিত রাঙ্গুনিয়া ডেক্স! ২০২৩ সালে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ দেশ মন্দায় পড়বে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। সংস্থাটি বলেছে, ২০২৩ সাল গত বছরের তুলনায় কঠিন হতে চলেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) এবং চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে আসছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আবার বাড়ছে। এই মহামারির ধাক্কায় এরই মধ্যে পর্যুদস্ত বৈশ্বিক অর্থনীতি। এর মধ্যেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ফলে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোও সুদহার বাড়িয়ে চলেছে। এই অবস্থায় গত অক্টোবরে আইএমএফ ২০২৩ সালের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমিয়ে পূর্বাভাস দেয়। ওই সময়ই চীন করোনাভাইরাসের মহামারি মোকাবিলায় তার ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতি থেকে সরে আসে। এরপর দেশটিতে ব্যাপকভাবে সংক্রমণ বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে আইএমএফ এখন মন্দার বিষয়ে সতর্ক করল।
১৯০ সদস্যের আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএমএফের প্রধান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সিবিএস টেলিভিশনের ফেস দ্য নেশন অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ অর্থনীতি এ বছর মন্দায় পড়বে বলে আশঙ্কা করছি আমরা। যেসব দেশ মন্দায় পড়েনি বা পড়বে না, তাদের ক্ষেত্রেও পরিস্থিতি এমন হবে যে কোটি মানুষের জীবনে মন্দার মতো প্রভাব পড়বে।’ স্থানীয় সময় রোববার সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন- তিনটি বড় অর্থনীতিই একই সঙ্গে শ্লথ হচ্ছে। চীনের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি। ২০২৩ সালের শুরুতেই দেশটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে পারে। তিনি বলেন, ‘আগামী কয়েক মাস চীনের জন্য কঠিন হতে চলেছে। এই পরিস্থিতি দেশটির প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে চলেছে। শুধু তা-ই নয়, এই পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলে, এমনকি পুরো বিশ্বের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এমন পরিস্থিতি বিগত ৪০ বছরে দেখা যায়নি।’
এশিয়ার জন্য ২০২২ সাল এমনিতেই কঠিন গেছে। এই অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে বেড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধকে এই অবস্থার জন্য অনেকাংশে দায়ী করা হয়। সুদহার বৃদ্ধির কারণেও অনেক পরিবার কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে।
চীনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতিতেও মন্দার ছোঁয়া লেগেছে। দেশটিতে চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনামসহ এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশ পণ্য রপ্তানি করে। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হওয়ার মানে হলো পণ্যের চাহিদা কমা। এতে এশিয়ার দেশগুলোর রপ্তানি আয় কমবে। এদিকে সুদহার বৃদ্ধিতে ব্যবসায় বিনিয়োগ কমার আশঙ্কা রয়েছে। প্রবৃদ্ধি কমলে বিনিয়োগকারীরা উল্টো বাজার থেকে অর্থ তুলে নিতে পারেন। যেকোনো দেশের ক্ষেত্রেই এমনটা ঘটতে পারে। ফলে খাদ্য ও জ্বালানির খরচ আরও বেড়ে যাবে। মান কমবে বিভিন্ন দেশের মুদ্রার। এতে আমদানি ব্যয় বেড়ে পরিস্থিতি আরও জটিল হবে। একটা পর্যায়ে কোনো কোনো দেশের জন্য ঋণ পরিশোধ কঠিন হয়ে উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
আইএমএফের পূর্বাভাস হলো, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হবে ২ দশমিক ৭ শতাংশ। ২০২২ সালে এই হার ছিল ৩ দশমিক ২ শতাংশ।
আইএমএফ প্রধান বলেন,চীনে করোনার বিধিনিষেধ তুলে দেয়ার ফলে আগামী কয়েক মাসে সংক্রমণ দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়বে। তিনি বলেন, ২০২৩ সালের শেষদিকে চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার হয়তো বাড়তে শুরু করবে। তবে তার আগে প্রবৃদ্ধির হার যে কমবে, তার প্রভাবে বিশ্বজুড়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। করোনার আগে চীন বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধিতে ৩৪ কিংবা ৩৫ অথবা ৪০ শতাংশ অবদান রেখেছে। এখন আর তেমন অবদান রাখতে পারছে না দেশটি। এটি এশিয়ার দেশগুলোর জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলেছে।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘আমি যখনই এশিয়ার নেতাদের সঙ্গে কথা বলি, তারা চীন নিয়ে প্রশ্ন করেন। তারা জানতে চান, চীনে হচ্ছেটা কী? চীন কী আবার আগের অবস্থানে ফিরতে পারবে?’
ইউরোপীয় ইউনিয়নে মন্দার পূর্বাভাস দিয়ে আইএমএফ প্রধান বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধের সবচেয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ইউরোপে। ২০২৩ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জোটের অর্ধেক দেশ মন্দায় পড়তে চলেছে।
যুক্তরাষ্ট্র প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র মন্দার কিনারে দাঁড়িয়ে রয়েছে। তবে দেশটি পুনরুদ্ধার শুরু করেছে। দেশটি হয়তো মন্দা এড়াতে পারবে। যুক্তরাষ্ট্রে শ্রমবাজার এখনো শক্তিশালী। এটি কেন্দ্রীয় ব্যাংককে শক্তি জোগাচ্ছে। এর জোরেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় শক্ত হাতে সুদহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে।
সূত্র- দৈনিক বাংলা